নার্সিসিস্ট শব্দটি আমাদের খুবই পরিচিত । তবে সাধারণ অর্থে আমরা মূলত অতিরিক্ত সেলফি তোলার প্রবণতা, নিজেকে সেলেব্রেটিদের মত সুন্দর ভাবা মানুষকে বুঝলেও মনোবিজ্ঞানের ভাষায় যে সকল মানুষ নিজের চিন্তা এবং ভাবমূর্তিকেই সবচেয়ে উত্তম বলে ভাবেন তাকে এই সমস্যায় আক্রান্ত বলে ধরা হয় । এটা শুধু সেলফি কিংবা নিজের চেহারাকেই সবচেয়ে ভাল ভাবা বুঝায় না বরং সব ক্ষেত্রে নিজেকেই সবচেয়ে উত্তম ভাবা বুঝায় ।
নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের(এনপিডি) বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে আত্মকেন্দ্রিকতা, অহংকারী চিন্তাভাবনা ও আচরণ , অন্যের প্রতি সহমর্মিতা ও বিবেচনার অভাব এবং নিজের প্রতি অত্যধিক মুগ্ধতা অন্যতম। এই ধরণের আচরণ সম্পন্ন মানুষকে অনেক সময় তার আশেপাশে থাকা মানুষেরা ম্যানিপুলেটিভ,স্বার্থপর ,অনুগ্রাহী এবং অনেক বেশি চাহিদাসম্পন্ন হিসেবে বর্ণনা করে থাকেন । নার্সিসিস্টিক স্বভাবের এই সকল মানুষদের এই আচরণগুলো তাদের পারিবারিক জীবন থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র এবং সামাজিক ক্ষেত্রেও দৃশ্যমান হয় এবং তাকে প্রভাবিত করে। তারা প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেকে অন্যদের চেয়ে স্পেশাল এবং ইউনিক হিসেবে দাবি করে যা অনেক ক্ষেত্রে তাদের সামাজিক সম্পর্ককে নষ্ট করে । কারণ প্রতি ক্ষেত্রে কেও যদি তাকে ছাড়া অন্য কেও চলতে পারবে না এবং সে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করে , অন্যদিক থেকে বিষয়টি সবসময় মেনে নেয়া হয় না। যদিও ষোড়শ শতাব্দীতে একজন রাজার জন্য এই ব্যবহার উপযুক্ত হিসেবে ধরা হত কিন্তু বর্তমান সময়ে সাধারণ মানুষের জন্য এই আচরণ স্বাভাবিক হিসেবে গণ্য নয় । এই সমস্যা যাদের রয়েছে তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ খুব সহজেই চোখে পড়ে যখন তারা অন্য কারো ছোট খাটো চ্যুতি-বিচ্যুতি নিয়ে সর্বক্ষণ অভিযোগ করতে থাকে ।
এনপিডি এর যে লক্ষণগুলো দেখা যায়
নিজেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা
তারা নিজেকে সবসময় অন্যদের চেয়ে অধিক উত্তম বলে মনে করে তাই উচ্চ স্ট্যাটাস সম্পন্ন মানুষ এবং অন্যান্য বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয় । অনেক সময় নিজের মেধা এবং অর্জনকে অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করে।
এক ধরণের ফ্যান্টাসির জগতে বসবাস করা
নিজেদের সম্পর্কে অতিরঞ্জিত চিন্তা-ভাবনার কারণার এক ধরণের ফ্যান্টাসির জগতে থাকে যেখানে সে নিজে সবচেয়ে বেস্ট।
নিয়মিত প্রশংসা পেতে পছন্দ করা
নার্সিসিস্টদের আত্ম-ভালবাসাকে অনেকটা বেলুনের সাথে তুলনা করা যায় , নিয়মিত প্রশংসা ছাড়া যার বাতাস চলে যায় । এই কারণে তারা এমন মানুষের সংগ পছন্দ করে যে সবসময় তার প্রশংসা করবে ।
অন্যদেরকে হীন প্রতিপন্ন করে আনন্দ লাভ করা
নার্সিসিস্টদের অন্যদের অনুভূতি বোঝার মত ক্ষমতা অর্জিত হয় না । নিজেকে অন্যের অবস্থানে রেখে কোন কিছু তাই বিবেচনা করতে পারে না এবং তাই তাদের মধ্য থেকে সহমর্মিতা হারিয়ে যায় । এই কারণে কাওকে অপমান করবার সময় তারা বিষয়টি বুঝতে পারে না।
নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার তৈরির পিছনে অনেক সময় নিজের দুর্বলতা ঢাকার প্রবণতা, পারিবারিক ও আশেপাশের পরিবেশকে দায়ী করা হয় । তদুপরি এই সমস্যার রোগীরা তাদের নিজের সমস্যা সহজে বুঝতে পারেন না এবং এটাকে সমস্যা হিসেবে মানতে চান না যে কারণে এখান থেকে কাওকে বের করে আনা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার ।
লেখক- প্রফুল্ল নক্ষত্র
রেফারেন্সঃ
১/https://www.helpguide.org/articles/mental-disorders/narcissistic-personality-disorder.htm
২/https://psychcentral.com/disorders/narcissistic-personality-disorder/