পথযাত্রা শুরু : ২৪ অক্টোবর ১৯৯৭
লক্ষ্য – স্বেচ্ছায় রক্তদানকে সামাজিক আন্দোলনে পরিনত করা।
“একের রক্ত অন্যের জীবন রক্তই হোক আত্মার বাঁধন “
স্বেচ্ছায় রক্তদানকে সামাজিক আন্দোলনে পরিনত করার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড.মুহম্মদ শহিদুল্লাহ হলে ৩০৭ নং কক্ষে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে সে বছরেই ২৪ অক্টোবর উক্ত হলে বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্নয় কর্মসূচির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে বাঁধন। যে যাত্রা আজো চলমান। ১৯৯৭ সালে পথযাত্রা শুরু হয় একটি হল থেকে কিন্তু ২৩ বৎসরে বাঁধনের বিস্তার ৫৪ জেলার ৭৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।১৯৯৭ সালে সরবরাহ কৃত রক্তের পরিমান ছিলো ৩০০ ব্যাগ এবং বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্নয় করা হয়েছিলো ৪৫০ জনের। ২০১৯ সালে এসে সরবরাহ কৃত রক্তের পরিমান দাঁড়ায় ৭৪,৮৪৬ ব্যাগ এবং বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্নয় সংখ্যা ১,৯৯,৯৭৪ জনের। প্রতি বছর ৬০% রক্ত সরবরাহ করে মুমূর্ষু রুগীর পাশে দাঁড়ায় বাঁধন। বাঁধন শুধুমাত্র একটি নাম/শব্দ নয়, হৃদয়ে গেথে যাওয়া অনন্য এক সম্পর্ক। আমরা বাঁধনের প্রাণ,আমাদের রক্তে বাঁধন পায় অক্সিজেন। বাঁধন চায় নিজেকে আজীবন মানুষের মাঝে বাঁচিয়ে রাখতে এবং আমরা আশা রাখি বাংলার প্রতিটা মানুষ একদিন স্বেচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে আসবে।আমরা বাঁধন কর্মী স্বপ্ন পূরণের স্বচ্ছ পথ দেখতে পাই এবং আশাবাদী সফলভাবে স্বপ্ন পূরণ করার।এবার অনেকের মনে প্রশ্ন!স্বপ্নটা কি? কি স্বপ্ন পূরণের প্রত্যয়ী বাঁধন কর্মীরা? তবে বলি- আমরা স্বপ্ন দেখি সেদিনের যেদিন, বাংলার প্রতিটি মানুষ নিজের রক্তের গ্রুপ জানবে এবং স্বেচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে আসবে।যে দিন আর রক্তের কোন অভাব থাকবে না, রক্তের অভাবে নিভে যাবেনা কোন প্রদীপ। অকালে নিশ্বেষ হবেনা একটি প্রাণও।কেউ বলবেনা রক্ত দিতে ভয় পাই। রক্তের চাহিদা শুনে রক্ত দেওয়ার ভয়ে ফোন অফ করে রাখবেনা, রোগীর লোকের কাছ থেকে বিনিময়ের আশা করবে না। রুগীর লোককে কথা দিয়ে কথা রাখবে এবং বলবেনা নানা অজুহাতের কথা।আমাদের মনোভাব হবে,আমরা স্বেচ্ছাসেবী, আমরা কাজ করবো আমাদের মন থেকে ভালোবাসার সাথে। কাজ করবো মা, মাটি ও দেশের জন্য দায়বদ্ধতা থেকে।
বাঁধনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য- স্বেচ্ছায় রক্তদানে উদ্ভুদ্ধকরন,সেচ্ছায় রক্তদান, অন্যান্য সেবা ও সচেতনতামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সুষ্ঠ সমাজ বির্নিমানের মাধ্যমে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা।
এবার আসি রক্তদানের যোগ্যতাঃ
১.বয়স ১৮-৫৭ বছরের মধ্যে হতে হবে।
২.ওজন ৪৮কেজি(পুরুষ) ৪৫ কেজি (মহিলা)।
৩.রক্তদান করা যাবে ১২০ দিন অর্থাৎ ৪ মাস পরপর(অবশ্যই শারীরিক সুস্থতা থাকতে হবে)।
রক্তদানের সুফল ঃ
১.প্রতি ৪ মাস পরপর রক্ত দিলে দেহে রক্ত কনিকা সৃষ্টির প্রবনতা বৃদ্ধি পায়।
২.নিয়মিত রক্ত দিলে উচ্চ রক্তচাপের সম্ভবনা অনেকাংশে কমে যায়।
৩.নিয়মিত রক্তদানে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকগুন বৃদ্ধি পায়।
৪.রক্তদানে কোনো ধর্মীয় বিধি নিষেধ নেই।৫.রক্তদানের মাধ্যমে বিনামূল্যে বিভিন্ন রোগের রিপোর্ট পাওয়া যায়(হেপাটাইটিস বি,হেপাটাইটিস সি,এইডস,সিফিলিস, ম্যালেরিয়া)।
রক্তদানের পর করনীয় ঃ১.১৫-২০ মিনিট শুয়ে থাকতে হবে।
২.২৪ ঘন্টা পর্যন্ত বেশী করে পানি ও তরল খাবার খেতে হবে
৩.৪ ঘন্টা পর হাতের ব্যান্ডেজ(Band Aid) খুলে ফেলতে হবে।
৪.রক্ত সংগ্রহের স্থান থেকে রক্ত বন্ধ হতে দেরী হলে তুলা দিয়ে চেপে রাখতে হবে।
৫.রক্ত দেওয়ার ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত অতিরিক্ত পরিশ্রম, বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা বা ড্রাইভ কারা যাবেনা।
৬.রক্তদানের পর কোনো সমস্যা হলে প্রয়োজনে রক্ত পরিসন্ধালনা বিভাগে যোগাযোগ করতে হবে।
আমরা বাঁধন কর্মী, আমরা ক্ষুধার্ত অন্যের ক্ষুধায়। আমরা বেদনাত্বক অন্যের বেদনায়।আমরা সংহার করতে পারিনা সংসয়ে কাঁদি। যখন রক্ত পাইনা তখন সংসয় একটি জীবন সংহারের, আমরা চেষ্টার ত্রুটি রাখিনা সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করি সংহারকে সংযত করতে।আমরা সবার মতোই একজন সাধারণ মানুষ। তফাৎ টা শুধু কেউ রক্ত দেয় কেউ নেয়। কেউ রক্ত পাওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকে আবার কেউ চাহিদা পূরণের অধীর চেষ্টায় ব্যাস্ত থাকে।অনেকে আমাদের বলে রক্ত চোষা, তবে বলতে হয়, রক্তচোষা তারা যারা দেখে রক্তের অভাবে একটি জীবনের বিলিয়ে যাওয়া কিন্তু তা শর্তেও নিজের শরীরের অতিরিক্ত রক্ত স্তুপ করে রাখে নষ্ট করে ফেলে।তবুও অন্যের জীবন বাচাঁনোর মনুষ্যত্বটুকু জাগিয়ে তোলে না।শ্রদ্ধা তাদের জন্য, যারা নিয়মিত রক্তদান করেন এবং রক্তদানে অন্যকে উৎসাহিত করেন। ভালোবাসা তাদের জন্য, যারা রক্ত দিতে ইচ্ছুক সঠিক বয়স এবং ওজন এর অপেক্ষায়। অভিনন্দন তাদের জন্য, যারা বয়স ওজন থাকার পরেও এতোদিন উপলব্ধি করেনি যে রক্ত দিবেন কিন্তু এখন উপলব্ধি করছেন এবং রক্তদানে ইচ্ছুক।সবশেষে এটুকুই বলতে চাই, আপনারা জীবনে অনেক ভালোকাজ করেছেন অনেক মানুষের উপকার করেছেন কিন্তু সুস্থ ও শারীরিক স্বাবলম্বী থাকা শর্তে ও কখনো কারোর জীবন বাঁচানোর জন্য রক্তদান করেন নি। আপনারা শুধু একবার রক্তদান করেন অনুভব করতে পারবেন শান্তি আর তৃপ্তি রক্তদানের মাধ্যমে। এটা মনে রাখবেন সময়ের নিয়মে আপনিও নিজ রক্তচাহিদায় থাকতে পারেন। তখন অজুহাত ছাড়াই অনেকে রক্তদানে এগিয়ে আসবে কিন্তু আপনি তখন নিজের মনের কাছে নিজেই অপরাধী আর প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাবেন।
“রক্তদানে বাঁচবে জীবন তেইশ শেষে বাঁধনের পণ “
১৮ তে বেড়ে ওঠা, ১৮ তে নাগরিক, ১৮ তে রক্ত দিয়ে একটি দেহে প্রাণ দিক।