আমি পরমতসহিষ্ণুতাকে আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলোর একটি বলে মনে করি। রাস্তার যানজট থেকে শুরু করে সাম্প্রদায়িক দাংগা, পারিবারিক, সামাজিক; মোটাদাগে বললে বেশিরভাগ অশান্তির মূলেই রয়েছে এই গুণটির অভাব। নিজের মতামতকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে যখন অপরকে দমন করা হয় তখনি তৈরি হয় একটি কলহপূর্ণ পরিবেশ। অত্যধিক “superiority complex” এর কারণেই কিনা জানি না তবে অনেকেই কোন বিষয়ে সাধারণ একটু মত পার্থক্য হলেই অপর পক্ষকে নিজের শত্রু হিসেবে ভাবতে শুরু করে। এমনকি বিষয়টি অনেক সময় সংঘর্ষ, মারামারিতে গিয়েও উত্তীর্ণ হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে আলোড়ন তোলা ঘটনা নিয়েই বলি আজ। একজন নারী বোরখা পরিধান করে ছেলের সাথে ক্রিকেট খেলেছেন বলে অনেকে এটার সমালোচনা করেছেন। অথচ পোশাক নির্ধারণ যার যার নিজস্ব ব্যাপার। কেও শাড়ি,চুড়ি পরলেই স্বাধীন আর কেও বোরখা পরলেই পরাধীন হয়ে যায় এমন ধারনা কখনোই “আধুনিকতা” হতে পারে না। বরং প্রত্যেকটা মানুষের নিজের রুচিবোধ অনুযায়ী পোশাক পরার বিষয়টিকে মেনে নেয়াই স্বাধীনতার সূত্রকে অনুসরণ করা উচিত। কোন একটি মতাদর্শের অনুসারী হলেই অপর মতাদর্শের সব কিছুকে খারাপ হিসেবে উপস্থাপন করা একটি বিষয়কেই স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তুলে,তা হল মানুষের মধ্যকার পরমতসহিষ্ণুতার অভাব। আমি আমার মতকে উপযুক্ত যুক্তি প্রমাণ দ্বারা তুলে ধরতে পারি কিন্তু সেটি মেনে নিতে কাওকে বাধ্য করতে পারি না। আমার যুক্তি যদি অখন্ডনীয় হয় তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মানুষ তাকে মেনে নিবে, আর যদি মেনে নাও নেয় তবু আমরা জোর করতে পারি না। মতের অমিল হলেই যারা অপর পক্ষকে আক্রমণ করে বসেন তাদের আর এক স্বৈরাচারী শাসকের মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। একবার চিন্তা করুন যদি রাস্তায় চলাচলের সময় চালকগণ ছোট খাটো বিষয় নিয়ে কলহ না জুড়ে পরস্পরকে সৌহার্দপূর্ণ আচরণ দেখাত তাহলে আমাদের জন্য চলাচল কি আরো নিরাপদ হত না? শুধুমাত্র ওভারটেকিং টেন্ডেন্সির কারণে দেশে কি পরিমাণ দুর্ঘটনা ঘটে তা নিঃশ্চই ভাববার অবকাশ রাখে না। আর ধর্মীয় আদর্শ ব্যতিক্রম হবার কারণে পরস্পরকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির প্রবণতা তো পুরো বিশ্ব জুড়েই দেখা যায়।
মানুষ মাত্রই ব্যতিক্রম, তাদের মতামত,চিন্তাধারা, আদর্শ আলাদা হবে এটাই বাস্তব সত্য। এই বিষয়টিকে আমরা যদি অন্তরে ধারণ করতে পারি তাহলেই সম্ভব শান্তি প্রতিষ্ঠা। ব্যতিক্রম মানেই অসুন্দর নয় বরং বৈচিত্র্য আছে বলেই পৃথিবী এত আকর্ষণীয়।