বিশ্ব পুরুষ দিবস আজ

আজ বিশ্ব পুরুষ দিবস পালিত হয়েছে। ঘটা করে এই দিবস পালন করা না হলেও অনেকেই পুরুষ দিবসের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে ঠিকই। এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিলো, “পুরুষ ও ছেলেদের সাহায্য করো।”

কেমন যেনো মনে হচ্ছে না? এতদিন থেকে শুনে এসেছি নারীদের সাহায্য করো। সেখান থেকে পুরুষদের সাহায্য করার কথা-টি সম্পূর্ণ নতুন ধারণা। কিন্তু ধারণাটা নতুন নাকি ধারণার প্রকাশ নতুন? আমাদের সমাজে পুরুষ বলতে এমন মূর্তিকে বুঝি, যে কোনো দুঃখ পাবে না, শত কষ্টেও কাঁদবে না, যত আঘাতই আসুক একা হাতে সামলাবে, পুরো পরিবারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে দায়িত্বের ভারে নুইয়ে পড়বে। তবুও কারও সাহায্য নেওয়া যাবে না। তাকে একাই সব করতে হবে। এভাবে শত দুঃখ-কষ্ট লুকিয়ে রেখে দায়িত্বের বেড়াজালে আবদ্ধ পুরুষটি এক সময় মানসিকভাবে এতটাই ভেঙে পড়ে যে তাকে নিঃশেষ হয়ে যেতে হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ থেকে জানা যায়, অনূর্ধ্ব ৪৫ বছর বয়সী পুরুষদের জীবনের বড় ঘাতক আত্মহত্যা। কারণ তাদের উপর থাকে অতিরিক্ত চাপ। সংসারের খরচ চালানোর চাপ, নিজের অনূভুতি প্রকাশ করতে না পারার চাপ, সমাজে নিজের ভাবমূর্তি কঠিন হিসেবে বজায় রাখার চাপ।অথচ এই পুরুষেরাই আপনাদের সবচেয়ে আপনজন। কেউ বাবা, ভাই, বন্ধু, প্রেমিক, স্বামী, পুত্র হয়ে আপনাদের পাশে থাকেন। হয়ে ওঠেন আপনাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। অথচ আপনারা কি তাদের খোঁজ নিয়ে দেখেছি কেমন আছেন তারা? তারা যেমন আপনাদের পরম আশ্রয় ঠিক সেভাবেই আপনাদেরও হয়ে উঠতে হবে তাদের পরম আশ্রয়স্থল হিসেবে। তারাও যেনো রোগ, শোক, দুঃখ-কষ্ট প্রকাশ করতে পারে।

এরকম ভাবনা থেকেই ১৯ নভেম্বর বিশ্ব পুরুষ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। পুরুষ দিবস পালনের প্রস্তাব প্রথম করা হয় ১৯৯৪ সালে। তবে ইতিহাস বেশ পুরোনো। ১৯২২ সাল থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নে পালন করা হতো রেড আর্মি অ্যান্ড নেভি ডে। এই দিনটি পালন করা হতো মূলত পুরুষদের বীরত্ব আর ত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে।নব্বই দশকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও মাল্টায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ফেব্রুয়ারিতে পুরুষ দিবস পালনের জন্য বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। যদিও অনুষ্ঠানগুলো খুব একটা প্রচার পায়নি। অংশগ্রহণও ছিল কম। পরবর্তী সময়ে ১৯ নভেম্বর পুরো বিশ্বে পুরুষ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।পুরুষ ও ছেলেদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি, তাদের নিয়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি, নারী-পুরুষের জেন্ডার সম্পর্ক উন্নয়ন, জেন্ডার সাম্যতা, পুরুষ ও ছেলেদের অর্জন-অবদানকে উদযাপনের জন্যই মূলত প্রতিবছর বিশ্ব দিবস উদযাপন করা হয়ে থাকে। প্রতিবছরই থাকে আলাদা আলাদা প্রতিপাদ্য। এ বছরের প্রতিপাদ্য- হেলপিং মেন এন্ড বয়েজ- পুরুষ ও ছেলেদের সাহায্য করো। পুরুষ দিবস পুরুষ ও ছেলেদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার সাথে সাথে সমাজের প্রতি পুরুষদের দায়িত্বের কথাও মনে করিয়ে দেয়। সেই সাথে পুরুষদের অধিকার সম্পর্কেও সচেতনতা বাড়াতে এই দিবস পালন করা হয়ে থাকে।অন্যান্য দিবসের মতই পুরুষ দিবস পালনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সকলে বুঝতে পারা জরুরি এবং এ দিবসটির প্রতিপাদ্য সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হোক তা এখন সময়ের দাবী।

লেখক: উম্মে কুলছুম সেক্টর স্পেশালিষ্ট, স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম, ব্র‍্যাক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *