হিজ ইনট্র্যান্স

সাহসী কন্যার সিক্সটিন ডেজ এক্টিভিজমের আজকের আয়োজন ছিল “হিজ ইনট্র্যান্স”। আয়োজনের শুরুতে অন্তু আহমেদ আমন্ত্রিত অতিথিদের স্বাগতম জানান।

শুরুতে মিশাল বিন সালিম বলেন, নারীদের প্রথমত মানুষ হিসেবে ভাবতে হবে। তারপরে আসতে হবে যে জেন্ডার হিসেবে সে মেয়ে। এবং নারীদের চাকরিতে সুযোগ সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি তাকে চাকরির যোগ্য করে তুলতে হবে । আগে নারীকে যোগ্য করে তুলতে পারলেই সম্ভব তাকে দেয়া সুযোগ সুবিধাগুলো কাজে লাগানো।  পুরুষেরাও নির্যাতনের শিকার হন কিন্তু সামাজিক ট্যাবুর কারণে আওয়াজ তুলতে পারেন না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু নারীদের নিয়ে কাজ করলে হবে না। সমাজে নারী পুরুষ সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে। না হলে অদূর ভবিষ্যতে পুরুষেরা তাদের অধিকারের জন্য আওয়াজ তুলতে বাধ্য হবে।  সমাজে ছেলেদের প্রতি স্টেরিওটাইপ চিন্তাভাবনা ছেলেদের প্রতি ডিস্ক্রিমিনেশন বলে উল্লেখ করেন। যেমন, ছেলেরা কাদতে পারবে না, ছেলেদের চাকরি না করলে বউ পাবে না এসব ছেলেদের উপর মানসিক চাপের সৃষ্টি করে ।  ছেলেদের বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ার কারণেই পরবর্তীতে সে তার চেয়ে দূর্বল ভেবে নারীদের উপর নির্যাতন ঘটায়। অনলাইনেও একই রকম ঘটনা ঘটে বলে উল্লেখ করেন।        

মোঃ আলমগীর কবির নিজেকে তরুণ সংগঠক হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেন, তার জীবনে কাজের শুরুটা শিশুদের অধিকার নিয়ে।  মাঠে-ঘাটে আর সব সাধারণ মানুষের মত খেলতে পারতেন না। কেউ খেলতে নিতও না যে হয়ত তিনি ঠিকভাবে খেলতে পারবেন না ভেবে। তাই হাতে প্রচুর সময় থাকত। এমন সময় একটা সংগঠনের সাথে পরিচয়ের মাধ্যমে তার কাজের শুরু ২০১০/২০১২ সালের দিকে। এখন তিনি পুরোপুরি অধিকার বিষয়ক বিভিন্ন সংস্থার সাথে কাজ করছেন। জেন্ডার ভিত্তিক নির্যাতন বন্ধ করতে হলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে কাজ করতে হবে বলে জানান তিনি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পত্রিকা খুললেই নারী নির্যাতন, ধর্ষণ এসব দেখা যায়।   নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে হবে পুরুষদের কাছে পৌঁছাতে হবে। শুধু পুরুষদের কাছে পৌঁছালেই হবে না তাদের কথাও শুনতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে যেসব পুরুষ ধর্ষক হয়ে ওঠে তারা কোন না কোনভাবে শিশুকালে শারিরীক নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। এমন তথ্য উল্লেখ করে তিনি নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে এই জায়গাগুলোয় কাজ করার গুরুত্ব আরোপ করেন। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা প্রতিবন্ধী তারা প্রকাশ করতে পারে না তাদের সাথে কি হয়েছে। যা আরও বেশি কষ্টদায়ক। একজন প্রতিবন্ধীই কেনো প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করবে এমন প্রশ্নও রাখেন তিনি। সমাজের সবার উচিত সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের নিয়ে কাজ করা এমন কথা বলে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।   

শাফায়েত জামিল নওশান তার বক্তব্যের শুরুতেই তুলে ধরেন সমাজ কিভাবে একটা শিশুকে পুরুষ এবং নারী হিসেবে গড়ে তুলতেছে। ছেলে শিশুদের ছোটবেলায় ব্যাট, বল, বন্ধুক, গাড়ি এসব কিনে দেওয়া হয়। অন্যদিকে মেয়ে শিশুদের পুতুল কিনে দেওয়া হয়। এভাবেই ছেলেদের বাইরের কাজ ও মেয়েদের ঘরের কাজে অভ্যস্ত হতে শিখিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া ছেলেরা ভায়োলেন্ট হওয়ার পেছনে তার শিশুকাল দায়ী বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, ছেলেরা মারামারি করে আসলে তাকে বাহবা দেওয়া হয় যে সাহসী ছেলে যার কারণে সে পরবর্তীতে নারী নির্যাতনের মত কাজে উদ্ভুদ্ধ হয় বলেও মনে করেন তিনি।  অনলাইনে অল্পবয়সী ছেলেরা অনেক ধরনের ছোটখাটো অপরাধ করতে করতে এক সময় ধর্ষণের মত জায়গার পৌঁছায় শুধুমাত্র জবাবদিহিতার অভাবে। এমন মতামত প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়া ডিজেবল মানুষ বলে সমাজে কিছু নেই বলে বিশ্বাস করেন তিনি।   ভার্চুয়াল জগতে পুরুষেরাই কেন বেশি সহিংসতা ঘটায় অন্তু আহমেদের এমন প্রশ্নের জবার আলমগীর   বলেন, ফেসবুকে এই ঘটনা গুলো বেশি ঘটে। যেখানে নারীরাই বেশি সহিংসতার শিকার হয়। ফেসবুকের টার্মস অফ কন্ডিশন না থাকায় এটি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।     পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবও এর জন্য দায়ী বলে মনে করেন তিনি। আমাদের পাঠ্যপুস্তকে সামাজিক মাধ্যমে নারীদের সম্মান ও নিজেদের সুরক্ষা সংক্রান্ত কোন অধ্যায় বা কিভাবে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করবে সে সংক্রান্ত অধ্যায়  থাকা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *