গত ২৫ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে ‘দি ব্রেভ গার্লস’ এর ক্যাম্পিং “সিক্সটিন ডেইস অ্যাক্টিভিজম: লেটস স্পিক আপ” । ক্যাম্পেইন এরই কর্মসূচির একটি অংশ হিসেবে রয়েছে বিশেষ আলোচনা সভা। ২৯ নভেম্বর এই ক্যাম্পেইনের প্রথম আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়, যার বিষয়বস্তু ছিল “সহিংসতার কোনো জাতীয়তা নেই”। রবিবার স্ট্রিম ইয়ার্ড ভিডিও কনফারেন্স প্লাটফর্মে আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে রাত ৯টায়। আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে ছিলেন-
১। কেনিয়া থেকে ইয়ুথ এডভোকেট ও লিটারেসি অ্যাম্বাসেডর অ্যালুমনাই ফর ওয়ার্ল্ড লিটারেসি ফাউন্ডেশন ফেইথ থিম্বা
২।ইন্ডিয়া থেকে গার্ল চেঞ্জমেকার ও গার্ল অ্যাডভোকেসি অ্যালায়েন্স এবং ইয়ুথ অ্যাডভোকেট অফ প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়া ও কে. ভি.আর ইনস্টিটিউশনস স্টুডেন্ট ইউনিয়ন এর প্রেসিডেন্ট সাকাইনা সোলামাইত সোয়ান।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা এবং উপস্থাপনা করেন রেনেকা আহমেদ অন্তু, ইয়ুথ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অফ দি ব্রেভ গার্লস। অনুষ্ঠানটির শুরুতে উপস্থাপক রেনেকা আহমেদ অন্তু অতিথিদের কাছে “দি ব্রেভ গার্লস” এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দি ব্রেভ গার্লস সকল লিঙ্গের মানুষকে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা থেকে রক্ষা করার জন্য কাজ করে চলছে। “দি ব্রেভ গার্লস” এর উদ্দেশ্য আমাদের সমাজে সকলের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জেন্ডার ইকুয়ালিটি প্রতিস্থাপন করা। তিনি অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু “সহিংসতার কোনো জাতীয়তা নেই” সম্পর্কে বলেন যে, বর্তমানে সারাবিশ্বে নানাভাবে লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা ছড়িয়ে রয়েছে। বিশেষ করে নারীদের প্রতি সহিংস মনোভাব বিশ্বের সকল দেশেই দেখা যায়। ফেইথ থিম্বা বলেন, “এই করোনা মহামারির সময় নারীর প্রতি সহিংসতা তুলনামূলক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাল্যবিবাহ, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি সকল কিছুই বৃদ্ধি পেয়েছে । আমাদের দেশে করোনা মহামারীর এই সময়ে বহু নারী এবং শিশু অপুষ্টির শিকার হচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু খাদ্যদ্রব্যের প্রয়োজন বেশিরভাগ নারী ও কন্যাশিশু তা পাচ্ছে না”। তার বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, মেয়েরা ঘর থেকে বের হলেই ইভটিজিং , যৌনহয়রানিমূলক মন্তব্য, বিভিন্ন মাত্রার যৌন নির্যাতন ইত্যাদি এবং বিভিন্ন ধরনের ভার্বাল- অ্যাবিউজের শিকার হন। এই সকল ভার্বাল অ্যাবিউজের বিরুদ্ধে কোন ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়াও সম্ভব হয় না। পরিবারে নারীদের মতামতের সমান গুরুত্ব থাকা প্রয়োজন। এজন্য নারীদের শিক্ষা গ্রহণের দিকে জোর দিতে হবে এবং দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে। যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তার ঘাটতি রয়েছে তাই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে নারীদের আরো সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।
সাকাইনা বলেন, “ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে নারীদের কোনো নিরাপত্তা নেই। তারা প্রতিনিয়ত ঐ ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে সাইবার বুলিং, হয়রানি, পর্নোগ্রাফি ইত্যাদি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ডিজিটাল দুনিয়া হোক কিংবা বাস্তবজীবনে, আমাদের সকলকে সবধরনের হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে।” তিনি আরো বলেন, একজন নারীকে তার পরিবারের সকল কাজ করতে হয়। যদি তিনি কর্মজীবী নারী হন তবে তিনি ঘরে ও বাইরে দুই দিকেই সমান ভাবে কাজ করে যান। তাই তার জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজন। কিন্তু বেশিরভাগ পরিবারই দেখা যায় যে, নারী তার প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য থেকে বঞ্চিত হয়। বেশিরভাগ পরিবারই মেয়েদের “বোঝা” হিসেবে দেখে। অনেক পরিবারই দেখা যায় যে, নারীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাই বৈবাহিক ধর্ষণের সংখ্যা ও দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক পরিবারেই মনে করা হয় নারীদের শিক্ষার কোনো প্রয়োজন নেই কেননা নারীরা অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হতে পারবে না,কেবল ঘর-সংসারই করে যাবে। পারিবারিক যেকোনো সিদ্ধান্তে নারীর মতামতের মূল্যায়ন করা হয় না।” তিনি মনে করেন , “পারিবারিক যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার থাকা প্রয়োজন। কেননা, ঘরনীই ঘরের ব্যাপারে সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম।” তার বক্তব্যে তিনি মিডিয়ার ভূমিকাকেও তুলে আনেন। নারীদের ভোগ্যপন্য ভাবানোর ক্ষেত্রে মিডিয়ার দায়িত্বশীল হওয়া আবশ্যক।
উপস্থাপক রেনেকা; কেনিয়া ও ভারতের যুব এডভোকেটদের আলোচনার মূল বিষয়বস্তুর সাথে একান্ততা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “যদিও বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে এখন নারী-ক্ষমতায়নের ব্যাপারে এগিয়ে আছে, তবুও জড়জীর্ণ পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে এখনো অনেকটা লড়াই দেশের সবজেন্ডার প্রতিনিধিদেরই একসঙ্গে লড়ে যেতে হবে। নারী ও কন্যাশিশুদের বাস্তব ও ডিজিটাল দুনিয়ায় নিরাপদ বোধ করানোর জন্যে আজও কিছু সুস্পষ্ট আইন-প্রণয়ন এবং বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ বৃদ্ধির আবশ্যকতা রয়েছে।”