বৈষম্য শব্দটির ক্ষেত্রভেদে ব্যাখ্যা

বৈষম্য শব্দটির আভিধানিক অর্থ, অসমতা,বৈসাদৃশ্য, বিভেদ। এক কথায় বলা চলে কোনো বিষয়ে অসমতা বা বিভেদ সৃষ্টি করাই হল বৈষম্য।
বৈষম্য বা বৈষম্যবাদের মৌলিক ধারণা হচ্ছে, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মধ্যে অসমতাভিত্তিক চিন্তা – ভাবনা এবং অসমতার ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর তুলনায় অপর কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী /দলকে হেয় প্রতিপন্ন করে তাকে/তাদের ন্যায্য সুযোগ -সুবিধা ও থেকে বঞ্চিত করা।
অর্থাৎ, যে কোনো অবস্থায় একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী /দল বা ব্যক্তি অপর একটি দল/গোষ্ঠী বা ব্যক্তিকে তাদের ন্যায্য সুযোগ -সুবিধা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত করে নিজেরা সেসব সুযোগ – সুবিধা ভোগ করে থাকলে বা করলে তাকে বৈষম্য বলে।

বর্তমান পৃথিবীতে বৈষম্যকে একটি ভয়াবহ সমস্যা ও অন্যায্য বিষয় হিসাবে গণ্য করা হয়।
বৈষম্যের শিকার ব্যক্তি অধিকার বঞ্চিনা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে সমাজে অন্যদের তুলনায় খারাপ বা নিচু অবস্থানে পতিত হয়। অপরদিকে বৈষম্যকারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী/দল অযৌক্তিক ভাবে কৌশল খাটিয়ে বা জোর করে অন্যর সম্পদ বা সুবিধা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সমাজে অশান্তি ও সংঘাত সৃষ্টি করে,এবং অসমতা ও অবিচার টিকিয়ে রাখে।

জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,
“যে কোনো ধরনের পার্থক্য যথা জাতি,গোত্র, বর্ণ,লিঙ্গ, ভাষা,ধর্ম, রাজনৈতিক বা অন্য মতবাদ, জাতীয় বা সামাজিক উৎপত্তি, সম্পত্তি,জন্ম বা অন্য মর্যাদা নির্বিশেষে প্রত্যেকেই এই ঘোষণায় উল্লিখিত সব অধিকার ও স্বাধিকার ভোগ করবেন “।

অর্থাৎ, মানবাধিকার ঘোষণা অনুযায়ী কোনো পরিচয়ের ভিত্তিতে কোনো মানুষের প্রতি কোনো ধরণের বৈষম্যের অবকাশ রাখা হয়নি।
এছাড়া ও জাত-পাতভিত্তিক সকল প্রকার বৈষম্য সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ করে জাতি,ধর্ম,বর্ণ ও জন্মগত পরিচয় নির্বিশেষে সকল মানুষকে সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে।

বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮(১) অনুচ্ছেদে নাগরিকদের প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য নিষিদ্ধ করে বলা হয়েছে,
” কেবল ধর্ম,গোষ্ঠী, বর্ণ,নারী-পূরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না।”

সংবিধানের ভিত্তিতে পরে দেশে যেসব আইন ও নীতি প্রনীত হয়েছে, সেসবেও নাগরিকদের প্রতি কোনো ধরণের বৈষম্য না করবার শর্তের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ পেয়েছে।
কিন্তু দুঃখজনক ভাবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ঘোষণা ও সনদ এবং বাংলাদেশের সংবিধান,বিভিন্ন আইন ও নীতিতে সকল নাগরিক কে সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রদানের ঘোষণা থাকলেও এখনো এদেশের বিভিন্ন শ্রেণী, গোষ্ঠী ও লিঙ্গের মানুষ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তবে,এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার হয় অর্থনৈতিক ভাবে দূর্বল,শিক্ষাবঞ্চিত ও অল্প শিক্ষিত এবং সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী।

স্থান, কাল ও অবস্থান ভেদে পৃথিবীব্যাপী যে বৈষম্য গুলো বেশি প্রতীয়মান হয় সেগুলো কয়েকটি হলোঃ

  • লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য,
  • জাতিগত বৈষম্য,
  • সম্প্রদায় /গোত্র /বর্ণভিত্তিক বৈষম্য,
  • ধর্মীয় বিশ্বাস ভিত্তিক বৈষম্য,
  • বয়স ভিত্তিক বৈষম্য,
  • শ্রেণীভিত্তিক বৈষম্য,
  • পেশা/চাকুরিগত বৈষম্য,
  • উপার্জন/মজুরিগত বৈষম্য,
  • শারীরিক প্রতিবন্ধকতাজনিত বৈষম্য,
  • অঞ্চলভিত্তিক বৈষম্য।

লেখক – মোছা: লিজা আক্তার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *