বৈষম্য রোধের প্রেক্ষাপট

সাংবিধানিক ও আইনি বিধিবিধান থাকলেও সমাজের বিভিন্ন স্তরের জন্য জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য এখনো প্রকট। দেশের মানুষের মধ্যে বৈষম্য নিরসন সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চয়তকরণ ও মানবাধিকার সুরক্ষায় রাষ্ট্র কখনো সফল হতে পারেনি। নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্যের কারণে রাষ্ট্র প্রকৃত উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না তাই রাষ্ট্রের প্রকৃত উন্নয়নের জন্য সব ধরনের বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন। কোন কোন ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন আনতে হবে তা কয়েকটি প্রেক্ষাপটের আঙ্গিকে তুলে ধরা হলো-

প্রেক্ষাপট ১ঃআমাদের দেশে বিদ্যমান পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার কারণেই মেয়েশিশু ও তরুণীসহ নারীদের পারিবারিক সহিংসতা সহ যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতন, অর্থনৈতিক নির্ধারণ, মজুরি বৈষম্য, চলাফেরায় বাধা সহ বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। নারীর প্রতি সহিংসতার পরিসংখ্যানগুলো এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরছে। মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ৪ হাজার ৬২২ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১ হাজার ৭০৩ জন। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ২৪৫ জনকে। অপহরণের শিকার হয়েছে ১৪৭ জন। নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে ২৬৪ জন। ফতোয়ার শিকার হয়েছে ২৪ জন। শুধু বর্তমানের চিত্র নয় ২০০১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ধর্ষণের পরিসংখ্যান দেখলে আতঙ্কিত হতে হয়। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর তথ্যানুসারে এই সময়ে মোট ধর্ষণের শিকার ১৩ হাজার ৬৩৮ জন, দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ২ হাজার ৫২৯ জন এবং ধর্ষণের শিকার শিশুর সংখ্যা ৬ হাজার ৯২৭। ধর্ষণ পরবর্তী খুন ১ হাজার ৪৬৭ এবং ধর্ষণ পরবর্তী আত্মহত্যা ১৫৪ জনের। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী জীবন যাপন উন্নয়নের জন্য লিঙ্গ ভিত্তিক বৈষম্য ও নির্যাতন দূর হওয়া প্রয়োজন।

প্রেক্ষাপট ২ঃবাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক উল্লেখযোগ্য অংশ বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক ব্যক্তি। শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিগণ যাতে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যক্তিগত পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন।

প্রেক্ষাপট ৩ঃসংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও নির্যাতিত হাওয়াই সমাজের দুর্বল তার শ্রেণী হিসেবে টিকে আছে। প্রতিনিয়ত আশেপাশের ঘটনা গুলো আমাদের ভাবতে বাধ্য করে যে এই জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব ও স্বার্থ রক্ষায় তাদের প্রতি সব ধরনের বৈষম্য দূর হওয়া প্রয়োজন ।

প্রেক্ষাপট ৪ঃধর্মীয় গোঁড়ামি কুসংস্কার ও মৌলবাদ চিন্তা বিকাশের কারণে বিভিন্ন ধর্ম ও দর্শন এ বিশ্বাসী মানুষের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে। এমনকি বৈষম্য রয়েছে একই ধর্মের বিভিন্ন গোত্র বা সম্প্রদায়ের মধ্যেও। এক্ষেত্রে প্রভাবশালী গোত্র ক্ষুদ্র গোত্রের মানুষের প্রতি বৈষম্য করে।পারস্পারিক সহনশীলতা, পরমতসহিষ্ণুতা বাড়াতে এই ধরনের বৈষম্য দূর হওয়া প্রয়োজন।

প্রেক্ষাপট ৫ঃমূলধারায় জনগোষ্ঠীর জাতিগত উচ্চম্মন্যতার কারণে তাদের দ্বারা বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসী বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ বিভিন্নভাবে অবহেলিত ও নির্যাতিত হয়ে চলছে। তারা যাতে অবহেলা ও নির্যাতনমুক্ত হয়ে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সমান সুযোগ ও মর্যাদা নিয়ে জীবন ধারণ করতে পারে সেজন্য তাদের প্রতি বৈষম্য দূর হওয়া প্রয়োজন।

আমাদের দেশে বসবাসরত মুচি,ডোম, মেথর প্রভৃতি দলিত জনগোষ্ঠীর সামাজিক বৈষম্যের শিকার। এরা নিজ এলাকার মূলধারার জনগোষ্ঠীর দ্বারা নানানভাবে বৈষম্য, নির্যাতনের শিকার হয়। এই জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব রক্ষা ও উন্নয়নের জন্য তাদের প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূর হওয়া প্রয়োজন।

মোছাঃলিজা আক্তার উই ক্যান রংপুর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *