বিজ্ঞান ও শিল্পের যোগসূত্র রয়েছে। আর এই যোগসূত্র সৌন্দর্যকে কেন্দ্র করেই।শিল্প কী? শিল্পের সৌন্দর্য আসলে কী? বিজ্ঞান শিল্পের মতো সুন্দর এই বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রথমে এ দুটো বিষয়কে যথাযথ বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
শিল্পঃশিল্পের সংজ্ঞা নিয়ে বিশাল মতানৈক্য রয়েছে।শিল্পকে ভাষার অবয়ব বলা যায়।শিল্পের মধ্য দিয়েই যোগাযোগ স্হাপন হয়।তবে শিল্পের কোন বাঁধাধরা সংজ্ঞায়ন হয়না।লুডভিগ উইটগেনস্টাইন বলেন,”আমরা যতদিন শিল্প নিয়ে অজ্ঞ থাকি ততদিন আমাদের শিল্পের সংজ্ঞা থাকে। ” অর্থাৎ শিল্পের নির্দিষ্ট ছকবাঁধা কোন সংজ্ঞায়ন আদৌ সম্ভব নয়।
সৌন্দর্যঃসৌন্দর্য,আসলে কাকে বলে?এ প্রশ্নের মুখোমুখি অনেকেই হয়েছে।সৌন্দর্যের কি সর্বজনস্বীকৃত সংজ্ঞা আছে?আমার চোখে যা সুন্দর তা আপনার চোখে সুন্দর নাও হতে পারে।সুন্দর এর মাপকাঠি সংস্কৃতি ও পরিবেশভেদে আলাদা।তবে এটা সর্বজনস্বীকৃত যে, শিল্পের সাথে সুন্দরের আত্নিক সম্পর্ক।শিল্প মানেই সুন্দর। একদম রসকসহীন ব্যাক্তি গান গুনগুনিয়ে উঠে, শিল্পের রস আস্বাদন করে।
শিল্প ও সৌন্দর্যঃতলস্তয়ের মতে,শিল্পী সাধারণের সাথে যোগাযোগ স্হাপনের জন্যই শিল্পের ব্যবহার করেন। কিন্তু আবার শিল্প সবসময় যোগাযোগ স্হাপন ও করেনা। শিল্পের সংজ্ঞার ব্যাপকতা অনেক। তাহলে শিল্পের সৌন্দর্যের ব্যাপকতা কতটুকু হবে,ভাবা যায়?
কিন্তু প্রশ্ন হলো বিজ্ঞান কি শিল্পের মতো সুন্দর?হয়তো শিল্প ও বিজ্ঞান, এই দুটো আলাদা ডিসিপ্লিন হওয়ার কারণে বরাবরই সাংঘর্ষিক অবস্হান গ্রহন করেছে। অনেকেই মনে করেন বিজ্ঞান রসকসহীন। বিশেষ করে, গণিত,পদার্থের মতো বিষয়গুলোকে সৌন্দর্যের আওতায় রাখা হয়নি।কিন্তু বিজ্ঞানীরা এই বক্তব্যকে বরাবরই অস্বীকার করেছেন।নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী ফাইনম্যান বলেছেন,”একজন শিল্পী ফুলে যে রূপ সৌন্দর্য দেখতে পান, তিনি একই ধরণের সৌন্দর্য দেখতে পান,কিন্তু উপরুন্তু তিনি ফুলের ভেতরকার সৌন্দর্য ও দেখতে পান,যেমন কীভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষ দ্বারা ফুলের পাপড়ি গঠিত হয়,কীভাবে বৈবতনিক উপযোজনের কারণে কীটপতঙ্গ আকর্ষণ করার জন্যে সুন্দর রঙ্গের সৃষ্টি হয়েছে।”পদার্থবিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর ” সত্য ও সৌন্দর্য “বই এ বলেন, বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সাথে সাথে সৌন্দর্যবোধেরও গুরুত্ব রয়েছে।তিনি বলেন, বৈজ্ঞানিক ধ্যানধারণার পেছনে সৌন্দর্যবোধ থাকা উচিত।স্যার জগদীশচন্দ্রবসুও সৌন্দর্যকে গুরুত্ব দিয়েছেন।অনেক সাহিত্যিক ও বিজ্ঞানী একই সাথে বিজ্ঞান ও শিল্পের সৌন্দর্যকে স্বীকার করেছেন।
উপরুন্তু আলোচনা থেকে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারি,বিজ্ঞান শিল্পের মতোই সুন্দর।শিল্প যেমন আমাদের আত্নিক সৌন্দর্য প্রদান করে,বিজ্ঞান ও কিন্তু কম না।আমরা যদি একটু সচেতন ভাবে লক্ষ্য করি শিল্পের সৌন্দর্যের প্রসার কিন্তু এই বিজ্ঞানের সাহায্যেই।এটাই কি বিজ্ঞানের সৌন্দর্য নয়?এই যে আপনি, আমি শিল্পীর কবিতা ও গানের রস আস্বাদন করি তাতো ঐ বিজ্ঞানের আবিষ্কারের মাধ্যমেই।বিদ্যুৎ, সোসাইল মিডিয়া সবই তো বিজ্ঞানের কল্যান।তাই পরিশেষে বলা,শিল্প আমাদের আত্নাকে যেমন উন্নত ও সুন্দর করে বিজ্ঞান ও ততটাই সুন্দর করে।বিজ্ঞান শিল্পের মতোই সুন্দর।
লেখক – সাদিয়া সাবাহ্,নৃবিজ্ঞান বিভাগ,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।