বিশ্বব্যাপী ‘পরিবেশের উপর যুদ্ধ ও সশস্ত্র সংঘাতের প্রভাব প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে ৬ নভেম্বর পালন করা হয়ে থাকে । ২০০১ সালের ৫ ই নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে নভেম্বরের ৬ তারিখকে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালন করার ঘোষণা দেয়া হয়।
যুদ্ধের সময় অনেক ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে যে কোন এক পক্ষের সফলতা আসে। প্রচুর রক্তপাত, মানব সম্পদের অপচয়ের মধ্য দিয়েই জয়ী হয় এক পক্ষ। এ সময় অজস্র রক্তপাত, প্রচুর সৈন্য আহত-নিহত হওয়ার সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয় যুদ্ধক্ষেত্র বা যে এলাকায় যুদ্ধ সংগঠিত হয় সেই জায়গার শহর, আবাসস্থল, ভূমি, সম্পদ ইত্যাদি। পুরো এলাকা যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। যার ফলাফল স্বল্প সময়ের জন্য হতে পারে আবার দীর্ঘ সময়ের জন্যও হতে পারে। মাঝে মাঝে তো সেই সব এলাকায় রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে হয়ত এক সময়ের পরিপূর্ণ আবাসস্থল। কোলাহলে পরিপূর্ণ শহরে ছেয়ে থাকে অমাবস্যার ঘোর কালো অমানিশা। যেখান থেকে বেরোবার কোন পথ থাকে না।
হিরোশিমা- নাগাসাকির ইতিহাসের দিকে তাকালে খুব সহজেই অনুমান করা যায় যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রের ভয়াবহতার সম্পর্কে। সেই সময়ে যুদ্ধে ব্যবহার করা পারমাণবিক বোমার ক্ষতিকর বিকিরণের ফলে চোখ, ত্বক আর ফুসফুসের ক্যান্সার নিয়ে বংশধররা বেঁচে আছে। যুদ্ধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া সেই এলাকায় বিকলাঙ্গতাও খুবই পরিচিত । এসব দিক বিবেচনা করেই জাতিসংঘ প্রথম এর পরিবেশগত বিষয়গুলো বিশ্বের সামনে আনে। তারা দেখিয়েছেন যে যুদ্ধের ফলে দূষিত হয়েছে পানি সরবরাহ, সামরিক সুবিধার নামে ফসল পুড়িয়ে বা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে, গাছপালা কেটে বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে, ফলে মাটি হয়েছে বিষাক্ত যার ফলশ্রুতিতে ব্যাপকহারে মারা গেছে পশু পাখি।
তাইতো ২০০১ সালে যুদ্ধের ভয়াবহতা প্রকৃতির উপর কি রকম প্রভাব ফেলে তা সবার সামনে তুলে ধরতে ও সেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমাতে সচেতনতা তৈরি করতে এই দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য তরুণ প্রজন্মের সামনে যুদ্ধ ও তার ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরা। এবং এ থেকে তরুণ প্রজন্ম যেন শিক্ষা গ্রহণ করে শান্তির পন্থা অবলম্বন করে সেটাও নিশ্চিত করা।। এই দিবসটি আরেকটি উদ্দেশ্য মূলত পরবর্তী প্রজন্মকে একটি শান্তিপূর্ণ ও দূষণ মুক্ত পরিবেশ উপহার দেয়ার জন্য। এই কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে এমনিতেই পৃথিবী ঘোর অমানিশায় নিমজ্জিত। তার উপরে আমরা যদি যুদ্ধের প্রাকৃতিক ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন না হই তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এ বিশ্ব বসাবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। তাই আমাদের নতুন প্রজন্মের দায়িত্ব আমাদের পরিবেশকে দূষণমুক্ত এবং যুদ্ধ ও সংঘাতের ফলে সৃষ্ট পরিবেশগত বিপর্যয়গুলো থেকে রক্ষা করা। একই সাথে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে ভবিষ্যতের পৃথিবীকে সুরক্ষিত করা।
লেখাঃ উম্মে কুলছুম