‘দি ব্রেভ গার্লস’ গত ২৫ নভেম্বর থেকে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা রোধের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে “সিক্সটিন ডেইস অ্যাক্টিভিজম: লেটস স্পিক আপ” অনলাইন ক্যাম্পিং করে আসছে। ক্যাম্পেইনের একটি কর্মসূচি বিশেষ আলোচনা সিরিজ। এছাড়াও ক্যাম্পিনং এর কর্মসূচিতে থাকছে; স্টোরি টেলিং সেশন, প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা, বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সিরিজ। বিশেষ আলোচনা সিরিজ এর একটি অংশ ছিল “এক্সক্লুসিভ সেশনঃ নিরাপদ ও নারীবান্ধক ডিজিটাল দুনিয়া”। রবিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুর তিনটায় জুম ভিডিও কনফারেন্স প্ল্যাটফর্ম এবং ফেইসবুক লাইভ স্ট্রিমে পর্বটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেশনটিতে জুমের মাধ্যমে সারাদেশ থেকে পঞ্চাশজনের অধিক সরাসরি যুক্ত ছিলেন। আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে ছিলেন-
১। ড. বদিউল আলম মজুমদার, কান্ট্রি ডিরেক্টর দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ এবং সভাপতি, জাতীয় কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরাম।
২। ড. এ.এইচ.এম. জিহাদুল করিম, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
৩। এডভোকেট আদিবা আনজুম মিতা, সংসদ সদস্য, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।
৪। Laura Criado Lafuente, ডিরেক্টর প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট এন্ড লার্নিং, প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সঞ্চালক রেনেকা আহমেদ অন্তু, ‘দি ব্রেভ গার্লস’ এবং “সিক্সটিন ডেইস অ্যাক্টিভিজম: লেটস স্পিক আপ” ক্যাম্পিং এর ওপর ১৫মিনিটের একটি প্রেজেন্টেশন দেন। পরবর্তীতে তিনি প্রথম বক্তা ড. বদিউল আলম মজুমদারকে সেশনে বক্তব্য দেবার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে ড.বদিউল আলম মজুমদার সাহসী কন্যার কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, “পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়তে হলে সমাজের সব মানুষের নিজেদের ভেতরের দানবকে বদলাতে হবে। পুরুষ মানেই, ডমিনেন্ট করার যোগ্য, এমন ভাবনা থেকে নারী-পুরুষ সকলকে বেরিয়ে আসতে হবে।” এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে, নারীদের বাধা পেরিয়েই এগিয়ে যাবার ব্যাপারে নানা অনুপ্রেরনামূলক কথা বলেন এবং ডিজিটাল ই-কমার্সের যুগে নারীদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে তথ্য প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জনের উপদেশ দেন। নারীবান্ধক ডিজিটাল জগত গড়ায় নারীদেরকে নিজেদের নানাবিধ মুভমেন্ট এ সহচর হিসেবে পুরুষদেরও সাদরে আমন্ত্রন জানানোর মনমানসিকতা গড়ে তোলার আহবান জানান।
ড. এ.এইচ.এম. জিহাদুল করিম বলেন, “ডিজিটাল জগতে প্রবেশের পূর্বে ডিজিটাল অরিয়েন্টেশন দরকার যা আমাদের সকলকে ডিজিটাল নাগরিকত্বকে ধারণ করতে শেখাবে। এতে করে অনলাইনে কোথায়, কাকে, কি মন্তব্য করতে হবে তা লোকে এসব প্লাটফর্ম ব্যাবহারের পূর্বেই শিখবে। যেহেতু আমাদের এ উপমহাদেশীয় ধ্যানধারণায় বাস্তবজীবনে নারীর প্রতি সহিংসতার ক্ষেত্রে ভিকটিম ব্লেমিং এর চর্চা আছে, তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নারীদের বেলায়ই কেবল অঘোষিত নানা বাধা-নিষেধ চাপিয়ে দেয়া হয়।” তিনি তার বক্তব্যে সামাজিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রে জড়জীর্ণ প্রবৃত্তি পরিবর্তনের জন্য দি ব্রেভ গার্লস এবং দেশের সকল যুব সংগঠনকে “সিক্সটিন ডেইস অ্যাক্টিভিজম: লেটস স্পিক আপ” ক্যাম্পিং এর মতো নানা সচেতনতামূলক কার্যক্রম অনলাইন ও অফলাইন সবক্ষেত্রেই ধারাবাহিকতাভাবে করে যাবার উপদেশ দেন। পাশাপাশি নারীবান্ধক ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের জন্য তিনি কঠোর, সুস্পষ্ট আইনের প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন।
Laura Criado Lafuente প্রথমেই সঞ্চালকের প্রেজেন্টেশনের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “যুবরা যখন কন্টিনিউয়াসলি নিজেদের অধিকারের জন্য কথা বলে, তখন তারা সাড়া পায়। আমাদের সঞ্চালক রেনেকা ও দি ব্রেভ গার্লসই এর জলন্ত দৃষ্টান্ত। শোষনমুক্ত ডিজিটাল জগতের জন্য অবশ্যই নারী-পুরুষ উভয়কেই মিলেমিশে কাজ করতে হবে। অবশ্যই এর জন্য সামাজিক মূল্যবোধের দিক থেকে নারীকে সম্মানের পাত্র হিসেবে বিশ্বাস করতে হবে। এবং এমন সামাজিক পরিবর্তনের জন্য সুস্পষ্ট নারীবান্ধক আইসিটি আইন প্রণয়ন প্রয়োজন। পর্যাপ্ত নীতিমালা ব্যতীত কখনোই নিপীড়ন পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব নয়।”
আলোচকদের আলোচনা শেষে প্রশ্নোত্তর সেশনে পেনালিস্টরা নারীবাদ নিয়ে চলমান নানা বিতর্ক নিয়ে সেশনে অংশগ্রহনকারীদের তথ্যমূলক ব্যাখ্যা প্রদান করে। সবশেষে সঞ্চালক উপস্থিত সকলকে এবং “সিক্সটিন ডেইস অ্যাক্টিভিজম: লেটস স্পিক আপ” ক্যাম্পিং এর সহযোহিতায় থাকা জাতীয় কন্যাসশিশু এডভোকেসি ফোরাম এবং সমতট মুক্ত স্কাউটকে ধন্যবাদ জানিয়ে এক্সক্লুসিভ সেশনের ইতি ঘটান।