নারীদের গর্জন

‘দি ব্রেভ গার্লস’ গত ২৫ নভেম্বর থেকে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা রোধের উদ্দেশ্যে “সিক্সটিন ডেইস অ্যাক্টিভিজম: লেটস স্পিক আপ” ক্যাম্পিং করে আসছে। ক্যাম্পেইনে স্টোরি টেলিং সেশনের তৃতীয় ও চতুর্থ পর্বের বিষয়বস্তু ছিল Girls out loud । মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) রাত নয়টায় জুম ভিডিও কনফারেন্স প্ল্যাটফর্ম এবং ফেইসবুক লাইভ স্ট্রিমে পর্বটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিম তারিন তাবাসসুম রিদি , ইফরাত জাহান ইলোরা, ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া,মৌসুম ইয়াসমিন এবং হুমায়রা সুলতানা।

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা এবং উপস্থাপনা করেন রেনেকা আহমেদ অন্তু, ইয়ুথ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অফ দি ব্রেভ গার্লস।অনুষ্ঠানের শুরুতে উপস্থাপক রেনেকা আহমেদ অন্তু বলেন , যেকোনো দুর্যোগে মহামারীতে সবচেয়ে বেশি নিপীড়িত ব্যক্তিটি হলো নারী। নারীরা যেন তাদের না বলা কথাগুলো সাহসের সাথে বলে সেই লক্ষ্যে দু’পর্বের স্টোরি টেলিং সেশনটি আয়োজিত হয়েছে। 
প্রথমেই ইফরাত জাহান ইলোরা তার না বলা কথাগুলো সকলের সাথে বলেন। তিনি জানান, তিনি যখন ৫-৬ বছরের শিশু ছিলেন তখন তিনি তাদের পরিবারের এক পরিচিত ব্যক্তির দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হন । তিনি বলেন, সেই শিশুকাল থেকেই তিনি নিজেকে এই ঘটনার জন্য দোষারোপ করে আসছেন। এখনো তিনি যখন একা থাকেন তখন এই ঘটনাটির কথা চিন্তা করেন ,যা তাকে মানসিকপীড়া দেয়। এ ঘটনার পর থেকে তার মধ্যে একটা ভয় কাজ করতে থাকে এবং তিনি হীনমন্যতায় ভোগেন।তিনি কোন অপরিচিত মানুষকে সহজে বিশ্বাস করতে পারতেন না। কিন্তু তিনি এখন উপলব্ধি করেছেন যে এই ঘটনার জন্য তিনি কোনভাবেই দায়ী নন। তিনি মনে করেন, আমাদের সমাজের মানুষদের ও তাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। নির্যাতিত নারী কোন ভাবেই তার সাথে হওয়া ঘটনার জন্য দায়ী নয়। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড নিয়ে ইফরাত জাহান ইলোরা বলেন , ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে নারীদের প্রতিনিয়ত নানা ধরনের বাজে কমেন্ট ও হ্যারাসমেন্টের শিকার হতে হচ্ছে। যেহেতু আমার অনলাইন ব্যবসা রয়েছে আমাকেও অনেক সময় নানা অপ্রস্তুত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তাই আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবার সচেতন হতে হবে। মিম তারিন তাবাসসুম রিদি বলেন, ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই আমাদের এমন কোন কাজ করা উচিত না যার ফলে অন্য কেউ অনলাইনে হয়রানির শিকার হয় কিংবা অস্বস্তি বোধ করে। অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আরো সচেতন হতে হবে।
দ্বিতীয় অতিথি মিম তারিন তাবাসসুম রিদি তার খুব কাছ থেকে দেখা বর্তমান সময়ের একটি অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তার একজন পরিচিত কন্যাশিশু বান্ধবীর বাবার দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়। প্রথমে ঐ শিশুটি কিছু বুঝে উঠতে না পারলেও পরবর্তীতে সে এই ব্যাপারটি বুঝতে পারে । কিন্তু সে এই কথাটি তার বাবা মাকে বলে উঠতে পারেনি । তিনি মনে করেন, ছোটবেলা থেকেই শিশুদের গুড টাচ ও ব্যাড টাচ সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে। শিশুদের সাথে বাবা-মার একটি বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে এবং শিশুরা তার সাথে হাওয়া কোন ঘটনা বলতে চাইলে তাকে বিশ্বাস করতে হবে। তিনি ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে নারীদের সাথে হওয়া হয়রানির ব্যাপারেও আলোচনা করেন। 
মৌসুম ইয়াসমিন বলেন, কর্মক্ষেত্রে যেকোনো কাজে নারীকে তার যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয় যেখানে পুরুষদের জন্য তা প্রযোজ্য নয়। তিনি বলেন, তাকে সব ক্ষেত্রে তার পুরুষ সহকর্মীর চেয়েও বেশি উদ্যমী হতে হয়েছে। আমাদের সমাজ এখনো একটি মেয়েকে লিডারশিপের আদর্শ মডেল স্বরূপ চিন্তা করতে পারে না। কর্মক্ষেত্রে নারীদের জন্য সহায়ক পরিবেশের সৃষ্টি করতে হবে। সমাজের মানুষ কি বলবে টানিয়ে চিন্তিত না হয়ে নারীদের তাদের নিজেদের মতো এগিয়ে চলতে হবে। নারীদের তাদের অধিকারের ব্যাপারে আরও সচেতন হতে হবে।
হুমায়রা সুলতানা যিনি একজন সফল মেহেদী আর্টিস্ট , সাহসী কন্যার সাথে তার সফলতার ক্ষেত্রে তাকে কি কি বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেন।তিনি বলেন ,যে কোন পেশায় সফলতা লাভের জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয় এবং সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আমি যে পেশায় আছি তার জন্য আমাকে মাঝে মাঝে খুব রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়। আশেপাশের মানুষ এটি নিয়ে অনেক ধরনের মন্তব্য করে। কিন্তু আমার বাবা-মা সব সময় আমাকে আমার কাজে অনেক উৎসাহ প্রদান করায় আমি আজ সফল হতে পেরেছি।
ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া যিনি পেশায় একজন সাংবাদিক তিনি বলেন, আমার পেশার কারণে আমাকে অনলাইন এবং অফলাইন দুই ভাবেই নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অনেক সময় বাসায় ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেলে রাস্তায় নানা ধরনের হয়রানি শিকার হতে হয় এবং আশেপাশের মানুষের অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। সাংবাদিকতার জন্য অনলাইনে সকল ধরনের মেসেজের রিপ্লাই দিতে হয়। কিন্তু অনেকেই উল্টাপাল্টা মেসেজ পাঠিয়ে হয়রানি করার চেষ্টা করে। 
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে উপস্থাপক সবার কথার সম স্বরেই বলেন, “আর চুপ করে সহ্য করা নয়। নারীরা এখন থেকে গর্জে বলেবে নিজেদের সাথে হয়ে যাওয়া সব অস্বস্থিকর ঘটনা নির্ভয়ে, নি:সংকোচে। কারণ কোন নরপশুর কৃতকর্মের দায় কখনোই কোনো নারীর নয়!”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *