মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে আমি আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ দ্বারা তিনটি ভাগে ভাগ করেছি – শাসক, শাসিত, যুক্তিসংগত।
শাসক শ্রেণির বৈশিষ্ট্যের সাথে আমরা সকলেই পরিচিত । নির্দেশ পালনে নয় ,প্রদান করতে এরা বেশি পছন্দ করে। যে কোন জায়গায় নেতৃত্ব গ্রহণে এরা তৎপর । অন্য কেও তার উপর কথা বলবে এই বিষয়টি সহজে মেনে নিতে পারে না । শাসন বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনে কূটকৌশল এবং নির্যাতন করতেও প্রস্তুত এরা। উদাহরণ হিসেবে আমরা ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসের আবুল চরিত্রটির কথা বলতে পারি যে কিনা বউ পিটিয়ে পৈশাচিক আনন্দ পেত । নিজেকে শাসক হিসেবে দেখানোর একটি মনোবৃত্তি এখানে ফুটে উঠেছে । এই রকম চরিত্র আমাদের আশেপাশে প্রচুর রয়েছে ।
দ্বিতীয় শ্রেণিটি হল শাসিত শ্রেণি । অবাক হলেও সত্য অনেকেই শাসিত হবার বিষয়টিকে সহজভাবে নেন । দীর্ঘদিন ব্রিটিশদের কাছে শাসিত হবার কারণেই কিনা জানি না , অনেক মানুষই পছন্দ করেন যে তার মাথার উপর এমন কেও থাকবে যে তার জীবনের সব কিছু নির্ধারণ করে দিবে । ছোটবেলায় স্কুলের ক্যাপ্টেন নির্বাচনের সময় থেকে এই শ্রেণির দেখা মেলে। ভালভাবে সব কিছু সামলানোর থেকে সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করবে এমন কাওকে নির্বাচন করতে বেশি পছন্দ করে। অনেক উচ্চ কন্ঠের অধিকারী, রাগী এমন কাওকে নিজেদের নেতা হিসেবে দেখতে চায় , পরবর্তীতে তার রাগ তাকেই সহ্য করতে হবে জেনেও। এমন অনেক মেয়েই আছে যারা জীবনসঙী হিসেবে এমন কাওকে চায় যে অনেক রাগী হবে ,রাগহীন ছেলেদের তাদের পছন্দ নয় । রেগে গিয়ে থাপ্পর মারবে, আবার ভালবাসবে এমন কাওকেই পছন্দ। এজন্যই হয়তো ভারতের “কবির সিং” সিনেমার নায়কের মতো মানুষকে সমাজে “সুপুরুষ” ডাকা হয়। অনেকে আবার শাসিত হবার বিষয়টি পছন্দ না করলেও সামাজিক ও অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে বিষয়টি মেনে নিতে বাধ্য হন । যেহেতু এখানে বাধ্য হচ্ছেন তাই এটিকে তার বৈশিষ্ট্য বলা যায় না। এদের আমি নিপীড়িত বলতে পারি।
এর বাইরে আছে যুক্তিগত শ্রেণি । তারা কাওকে শাসন করতে যেমন পছন্দ করেন না , তেমনি কেও তাকে শাসন করবে এই বিষয়টিও মেনে নেন না। যে কোন বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে যুক্তিসংগত সিদ্ধান্ত নিতে এরা পছন্দ করেন । যখন কোন পরিবার বা প্রতিষ্ঠানের সকলের মধ্যে এমন বৈশিষ্ট্য থাকে , তখন সেখানে খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ এবং শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সবার মতামতের সমান প্রাধান্য থাকে এবং যুক্তির মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ।
প্রফুল্ল নক্ষত্র