‘দি ব্রেভ গার্লস’ গত ২৫ নভেম্বর থেকে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা রোধের উদ্দেশ্যে “সিক্সটিন ডেইস অ্যাক্টিভিজম: লেটস স্পিক আপ” ক্যাম্পিং করে আসছে। ক্যাম্পেইনের একটি কর্মসূচি বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সভা। এছাড়াও ক্যাম্পিনং এর কর্মসূচিতে থাকছে; স্টোরি টেলিং সেশন, প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা, বিশেষ আলোচনা সিরিজ। আলোচনা সভার পঞ্চম পর্বের বিষয়বস্তু ছিল করোনাকালীন নারী। শুক্রবার(৪ ডিসেম্বর) দুপুর তিনটায় জুম ভিডিও কনফারেন্স প্ল্যাটফর্ম এবং ফেইসবুক লাইভ স্ট্রিমে পর্বটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে ছিলেন, করোনাযোদ্ধা নারী নিশাত নাসমিল স্নেহা , ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার, এইচআর অডিট এন্ড এক্সেলেন্স , হেড অফিস, আবুল খায়ের গ্রুপ এবং সোনিয়া আক্তার পুষ্প, আচল ফাউন্ডেশনের ট্রেইনি ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা এবং উপস্থাপনা করেন রেনেকা আহমেদ অন্তু, ইয়ুথ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অফ দি ব্রেভ গার্লস। অনুষ্ঠানের শুরুতে উপস্থাপক রেনেকা আহমেদ অন্তু অনুষ্ঠানটির মূল উদ্দেশ্য প্রকাশে বলেন, যেকোনো দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা কিংবা মহামারীর নিপীড়িনের তালিকায় নারীরা সবসময় প্রথম সারিতে থাকে। তাই আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু “করোনাকালীন নারী” এর উদ্দেশ্য, করোনার এই সংকট এবং মহামারীর সময়কালে আমাদের দেশের নারীরা কেমন আছেন তা তুলে আনা।
নিশাত নাসমিল স্নেহা তার করোনার সাথে লড়াই করার গল্প সকলের কাছে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “কেউ কোভিড- ১৯ এ আক্রান্ত হলে , সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না। মানসিক শক্তি সঞ্চয় করে এই মহামারীর সাথে আমাদের লড়াই করে যেতে হবে। এ ব্যাপারে আবেগপ্রবণ না হয়ে সাহসিকতা ও দৃঢ়তার সাথে এই মহামারীকে আমাদের মোকাবেলা করতে হবে। এই সময়ে পরিবার এবং প্রতিবেশীদের সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে । এই সময়ে মানসিকভাবে শক্ত থাকা এবং আশেপাশের সকলের সহযোগিতা দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য খুবই জরুরী।” কররমজীবি নারীদের জীবন কেমন হয় তা জানতে চাইলে বলেন, “কর্ম ক্ষেত্রে নারীরা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হয়। শুধুমাত্র নারী হবার কারণে নারীর যোগ্যতাকে অবমূল্যায়ন করা হয় এবং তাদের প্রতি এখনো অনেকে ভুল মনোভাব পোষণ করে। বেশির ভাগ মানুষের ধারণা মেয়েদের কাজ হবে গৃহকেন্দ্রিক। কিন্তু তার পরেও নারীরা গৃহের কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ করতে পারে না। নারী যদি পরিবারে কিংবা সমাজে কোন ধরনের সহিংসতার শিকার হন তবে তার জন্যেও নারীকেই দোষারোপ করা হচ্ছে । নারী ও পুরুষ সমাজে পাশাপাশি সমান অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে এই ধরনের মানসিকতা গুলো পরিবর্তন করতে হবে। নারীদের আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে হবে এবং তাদের প্রতি এই বৈষম্যের বাঁধ ভেঙে সমাজে এগিয়ে যেতে হবে।”
সোনিয়া আক্তার পুষ্প মনে করেন “এই করোনাকালীন সময়ে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি জোর দিতে হবে। এই করোনা পরিস্থিতি যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে কিংবা যারা আক্রান্ত হয়নি উভয় ব্যক্তিবর্গের উপরই মানসিকভাবে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। পুরুষপ্রধান সমাজে বেশিরভাগ সময় দেখা যায় যে নারীর অসুস্থতাকে বেশি গুরুত্ব সহকারে দেখা হয় না এবং অনেক সময় দেখা যায় নারীরা তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পায়না । এক্ষেত্রে তাদের অবহেলা করা হয়। তেমনি নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় ও তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না। মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় নারীদের নিজেদেরকে সচেতন হতে হবে। এই করোনাকালীন সময় করোনা রোগীর মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় পরিবারের সহযোগিতা ও সহমর্মিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মানসিক সুস্থতই পারিবারিকভাবে শান্তিপূর্ণ ও কলহমুক্ত জীবন যাপন এবং পরিবার থেকে শুরু করে সমাজে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা হ্রাস করতে পারে।”
নারীকে তার জেন্ডার পরিচয়ের বেড়াজেলে না আটকে রেখে, মানুষ হবার পরিচয়ের জন্য একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের আর্জি জানিয়েই “করোনাকালীন নারী” পর্বটির ইতি ঘটে।